ফাইনালের শুরুটা বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হলো স্বপ্নের মতো। আগে বোলিং বেছে নিয়ে প্রথম বলেই মিলল উইকেট। এরপর ফিল্ডিংয়ে কিছু ভুল হলেও বোলাররা চাপ ধরে রাখলেন। ফলে নিয়মিত বিরতিতে পড়তে থাকল পাকিস্তান শাহিনসের উইকেট। শেষদিকে ঝড় তোলা সাদ মাসুদকে থামিয়ে তাদেরকে সাদামাটা পুঁজিতে গুটিয়ে দিলেন আকবর আলীরা।
রোববার দোহায় এশিয়া কাপ রাইজিং স্টার্সের ফাইনালে টস হেরে আগে ব্যাট করেছে পাকিস্তান। পুরো ২০ ওভার খেললেও রকিবুল হাসান ও রিপন মন্ডলের বোলিং নৈপুণ্যে তাদেরকে ১২৫ রানে অলআউট করেছে বাংলাদেশ। এতে লক্ষ্যটা থাকছে তাদের নাগালের মধ্যে।
চলতি প্রতিযোগিতায় বল হাতে অসাধারণ ফর্মে থাকা রিপন ৩ উইকেট নেন ২৫ রানে। ২ উইকেট শিকার করতে আঁটসাঁট থাকা রকিবুলের খরচা কেবল ১৬ রান। যোগ্য সঙ্গ দিয়ে একটি করে উইকেট পান এসএম মেহেরব, জিশান আলম ও আব্দুল গাফফার সাকলাইন। বাকি দুটি রানআউট।
পাকিস্তানের মাত্র তিন ব্যাটার পৌঁছাতে পারেন দুই অঙ্কের ঘরে। সাতে নামা মাসুদ খেলেন ৩৮ রানের ঝড়ো ইনিংস। ২৬ বল মোকাবিলায় তিনটি করে চার ও ছক্কা হাঁকান তিনি। তার কল্যাণে শঙ্কা ছাপিয়ে শতরান পেরিয়ে যায় দলটির সংগ্রহ।
ম্যাচের প্রথম বলেই উল্লাসে মাতে বাংলাদেশ। পেসার রিপনের বল মিড অনে ঠেলে বিপজ্জনক সিঙ্গেল নেওয়ার চেষ্টায় সফল হননি ওপেনার ইয়াসির খান। সাকলাইন বল মুঠোয় জমিয়ে ভেঙে দেন স্টাম্প। ইয়াসিরের মতো রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফেরেন মোহাম্মদ ফারিক। মেহেরবের করা প্রথম ও ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে বোল্ড হন তিনি।
আরেক ওপেনার মাজ সাদাকাত এরপর প্রতিরোধ গড়ায় মনোযোগ দেন গাজী ঘৌরিকে নিয়ে। তাদের জুটি ডানা মেলতে দেননি বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল। মেহেরবের মতো তিনিও আক্রমণে গিয়েই সাফল্য পান। তার ভেতরে ঢোকা বলের লাইন মিস করে বোল্ড হন ঘৌরি। পঞ্চম ওভারে দলীয় ২৫ রানে তৃতীয় উইকেট পতন হয় পাকিস্তানের।
এবারের আসরে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা সাদাকাত একপ্রান্ত আগলে ছিলেন। কিন্তু তাকে মাথাব্যথার কারণ হতে দেননি জিশান। লং-অন দিয়ে ছক্কা হজমের পরের বলেই তিনি নেন প্রতিশোধ। ইনসাইড এজ হয়ে স্টাম্প হারান ১৮ বলে ২৩ রান করা সাদাকাত। দুবার জীবন পাওয়া আরাফাত মিনহাস পরাস্ত হন পেসার সাকলাইনের স্লোয়ারে। বোল্ড হওয়ার আগে ২৩ বলে ২৫ রান আসে তার ব্যাট থেকে।
ষষ্ঠ ওভারে মেহেরবের বলে সহজ স্টাম্পিং মিস করেন বাংলাদেশের অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক আকবর। নবম ওভারে সাকলাইনের বলে মিড অফে একেবারে অনায়াস ক্যাচ ফেলেন জিশান। তবে দুই দফা বেঁচে গেলেও সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন মিনহাস। শেষমেশ সাকলাইনের শিকার হন তিনি।
টপাটপ উইকেট হারিয়ে রান তোলার গতি কমে আসে পাকিস্তানের। তাদের দুর্দশা আরও বাড়ে পঞ্চদশ ওভারে। ইরফান খানকে এলবিডব্লিউ করে উদযাপনে মাতোয়ারা হন রকিবুল। ক্রিজে ধুঁকতে থাকা ইরফানের সংগ্রহ ২২ বলে ৯ রান।
দলীয় ৭৫ রানে ৬ উইকেট তুলে নেওয়ার পর পাল্টা আক্রমণের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। খোলস ঝেড়ে তেতে ওঠেন মাসুদ। মাহফুজুর রহমান রাব্বির করা ১৬তম ওভারে ১২, রিপনের করা ১৭তম ওভারে ১৫ এবং সাকলাইনের করা ১৮তম ওভারে ১৩ রান ওঠে। সপ্তম উইকেটে ২০ বলে ৪১ রানের জুটিতে অস্বস্তি বাড়ে বাংলাদেশের।
সেই কাঁটা দূর করে ১৯তম ওভারে নিজের সামর্থ্যের সেরাটা ঢেলে দেন রিপন। প্রথম বলে শহিদ আজিজকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে আটকানোর পর চতুর্থ বলে দারুণ ইয়র্কারে বোল্ড করে ছাঁটেন আগ্রাসী রূপে থাকা মাসুদকে। তার পরের বলে আরেকটি নিখুঁত ইয়র্কারে উবাইদ শাহ স্টাম্প খোয়ালে জাগে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও। তা অবশ্য পূর্ণতা পায়নি।
ইনিংসের শেষ বলে আকবরের সরাসরি থ্রোতে রানআউট হন আহমেদ দানিয়াল। অপরাজিত থেকে যান সুফিয়ান মুকিম। পাকিস্তান শেষ ৪ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে মোটে ৯ রান যোগ করতে পারে।

