নব্বইয়ের দশকে টেলিভিশনের পর্দায় একদল অভিনেত্রীর রাজত্ব ছিল। ধারাবাহিক হোক বা এক পর্বের প্যাকেজ—তাদের সাবলীল অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছেন দর্শকেরা। সেই অভিনেত্রীদের কেউ কেউ এখনো অভিনয়ে নিয়মিত, কেউ বেছে নিয়েছেন প্রবাসী জীবন। নব্বইয়ের দশকের সেই আলোচিত অভিনেত্রীরা এখন কে কোথায় আছেন, তা নিয়েই এই আয়োজন।
বিপাশা হায়াত
নব্বইয়ের দশকের অন্যতম শীর্ষ তারকা বিপাশা হায়াত। একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা আবুল হায়াতের মেয়ে ও অভিনেতা-নির্মাতা তৌকীর আহমেদের স্ত্রী বিপাশা হায়াত ক্যারিয়ারে অসংখ্য সফল নাটকে অভিনয় করেছেন। হুমায়ূন আহমেদের তুমুল জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘অয়োময়’-এ ‘লবঙ্গ’ চরিত্রে অভিনয় করে তিনি এতটাই জনপ্রিয়তা পান যে অনেকেই তাকে সেই নামে ডাকতেন। মঞ্চেও সরব ছিলেন। যুক্ত ছিলেন নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের সঙ্গে। একসময় অভিনয় করেছেন ‘আগুণের পরশমণি’র মতো চলচ্চিত্রেও। বর্তমানে অভিনয় থেকে দূরে থাকলেও লেখালেখি ও ছবি আঁকা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি এখন থিতু হয়েছেন আমেরিকায়।
আফসানা মিমি
নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের কালজয়ী ধারাবাহিক ‘কোথাও কেউ নেই’-এর ‘বকুল’ চরিত্রটি দিয়ে দর্শকদের মনে স্থায়ী জায়গা করে নেন আফসানা মিমি। আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘জিরো পয়েন্ট’ দিয়ে টিভিতে অভিষেক হলেও ‘বউ কথা কও’ নাটকটি ছিল তার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। পৌণঃপুনিক ও হাউজয়োইফ তার অভিনীত দুটি আলোচিত নাটক। মঞ্চ থেকে অভিনয়ে আসা এই শিল্পী পরে নাটক ও সিনেমায় কাজ করেছেন; পরিচালনাও করেছেন।
তমালিকা কর্মকার
মঞ্চ থেকে টিভি নাটকে আসা তমালিকা কর্মকারও অভিনয় করেছেন সাড়া জাগানো ‘কোথাও কেউ নেই’ ধারাবাহিকে। এই নাটকের তিন কন্যার একজন ছিলেন তিনি। আরণ্যক নাট্যদলের হয়ে মঞ্চে নিয়মিত অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্রেও কাজ করেছেন। ‘কীর্তনখোলা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি অভিনয় থেকে দূরে আছেন এবং বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী।
বিজরী বরকতউল্লাহ
বিটিভির বিখ্যাত প্রযোজক মোহাম্মদ বরকতউল্লাহ ও নৃত্যশিল্পী জিনাত বরকতউল্লাহর মেয়ে বিজরী বরকতউল্লাহ নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ‘সুখের ছাড়পত্র’ নাটক দিয়ে অভিনয়ে আসেন। ‘মেঘ কালো’ তার অভিনীত অন্যতম জনপ্রিয় নাটক। তিন দশকের বেশি সময় ধরে তিনি অভিনয়ে নিয়মিত। নাটক, টেলিছবি ও ওটিটি—সব মাধ্যমেই কাজ করছেন।
মিতা নূর
‘সাগর সেচার সাধ’ নাটক দিয়ে নব্বইয়ের দশকে অভিনয়ে আসেন মিতা নূর। তবে তিনি বেশি জনপ্রিয়তা পান মডেলিং করে। আফজাল হোসেনের নির্দেশনায় একটি ব্যাটারির বিজ্ঞাপনে তার বলা ‘আলো আলো, বেশি আলো’ জিঙ্গেলটি তখন মুখে মুখে ফিরত। বিজ্ঞাপনচিত্রটি নির্মাণ করেছিলেন আফজাল হোসেন। বিটিভির সাপ্তাহিক নাটক ও ধারাবাহিকে তিনি নিয়মিত মুখ ছিলেন। ২০১৩ সালে তিনি আত্মহত্যা করেন। ‘আগুণ খেলা’ তার অভিনীত শেষ নাটক।
ত্রপা মজুমদার
শিল্পী পরিবারে বেড়ে উঠেছেন ত্রপা মজুমদার। তার বাবা-মা দেশের দুই বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার ও ফেরদৌসী মজুমদার। টিভি নাটকে অনিয়মিত হলেও মঞ্চে নিয়মিত অভিনয় ও নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
সাবিনা বারী লাকী
একসময় টেলিভিশন নাটকে নিয়মিত অভিনয় করেছেন সাবিনা বারী লাকী। সেই সঙ্গে লোকনাট্যদলে যুক্ত ছিলেন অনেক বছর। তিনি এখন কানাডা প্রবাসী।
তাজিন আহমেদ
অভিনয়ের আগে বিটিভিতে উপস্থাপনা দিয়ে পরিচিতি পান তাজিন আহমেদ। ‘শেষ দেখা শেষ নয়’ নাটক দিয়ে অভিনয়ে পা রাখেন এবং প্রথম নাটকেই দর্শকদের নজর কাড়েন। হুমায়ূন আহমেদের ‘নীল চুড়ি’ নাটকে অভিনয় করে আলোচিত হন। অভিনয়, উপস্থাপনার পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতাও করেছেন। ২০১৮ সালে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান।
শমী কায়সার
শমী কায়সার রাজনীতির কারণে বিতর্কিত হলেও নব্বই দশক ধরে টানা অভিনয় করেছেন এবং পেয়েছেন বিপুল মানুষের ভালোবাসা। তার অভিনীত প্রথম নাটক ‘কেবা আপন কেবা পর’। এরপর অভিনয় করেন ‘যত দূরে যাই’ নাটকে। দুটি নাটক তাকে পরিচিতি এনে দেয়। টিভি নাটক ছাড়াও মঞ্চ নাটকে তিনি নিয়মিত ছিলেন একসময়। তার নাটকের দল ‘ঢাকা থিয়েটার’। বর্তমানে রাজনীতি ও ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় অভিনয়ে অনিয়মিত।
নুসরাত ইয়াসমীন টিশা
নব্বইয়ের দশকের আরেক জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ইয়াসমীন টিশা। জাহিদ হাসানসহ অনেক জনপ্রিয় অভিনেতার বিপরীতে অভিনয় করেছেন তিনি। জাহিদ হাসানের বিপরীতে ‘ঠিকানা’ নাটকে অভিনয় করে আলোচিত হন। ‘অন্বেষণ’ নাটক দিয়ে তার অভিনয় জীবন শুরু। তার অন্যান্য নাটকের মধে আছে ‘মানুষ’, ‘ভালোবাসায় বসবাস’, ‘জলাশয় কতদূরঘরের ছায়া’, ‘বেদনার বালুচর’, ‘নীলিমায় নীল’। বর্তমানে তিনি অভিনয় থেকে দূরে আছেন।

