তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের আওতাধীন বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেডে (বিডিসিসিএল) জনবল নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির নানা অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আবেদনের শর্ত শিথিল, পরীক্ষাকেন্দ্র পরিবর্তন, প্রভাবশালীদের সুপারিশসহ অনিয়মের মাধ্যমে সংস্থাটি একের পর এক জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই অনিয়মের পেছনে বড় ভূমিকা ছিল সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের। অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্তরা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দুর্নীতি করেছেন ইচ্ছামতো। এসব কর্মকাণ্ডের কারণে দেড় হাজার কোটি টাকায় স্থাপিত প্রকল্পটি অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে। আর এর সকল প্রকার সহযোগিতা করেন মুরাদ আলম মনির।
বিডিসিসিএল পরিচালনা পর্ষদের তৎকালীন এক সদস্য এবং সাবেক এমডি আবু সাইদের সুপারিশে নিয়োগ পান ব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) মুরাদ আলম মনিরকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক মুখ্য সচিবের সরাসরি সুপারিশে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে এখনো বহাল রয়েছে। এই বিষয়ে কোন পদক্ষেপ এখনো নিতে পারেনি আইসিটি বিভাগ।
আইসিটি বিভাগের কর্মকর্তা জানান, বিডিসিসিএলের কম্পিউটার অপারেটর রাশেদুল হাসান আইসিটি বিভাগের এক কর্মকর্তাকে আইসিটি বিভাগের ক্যান্টিনে হাসতে হাসতে বলছিলেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌফিক আল মামুনকে মুরাদ স্যার যা বলে তাই। এক কথায় মুরাদ স্যারের পরামর্শ নিয়েই মামুন স্যার চলেন। মুরাদ স্যারকে দিয়ে আপনার শালীর প্রমোশন করিয়ে দিব।’
গাজীপুরের ধীরাশ্রম এলাকায় পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাসভবনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর হামলা হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা। এর আগে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হাতে মোটা অংকের টাকা তুলে দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক মুখ্য সচিবের সরাসরি সুপারিশে নিয়োগ পাওয়া বিডিসিসিএলের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) মুরাদ আলম মনির।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাজীপুরের কালিয়াকৈরের মূল ফটকের দুইজন গার্ড বলেন,‘ গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণের সময় একটা গাড়ি বার বার গেটে এসে আওয়ামী লীগের কালিয়াকৈরের নেতাদের হাতে ব্যাগ দিয়ে যান আর এই ব্যাগ তখন মুরাদ আলম মনির হাতে তুলে দেন। তিনি গাড়ি থেকে একবার নেমে মাক্স খুলে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তখন কালিয়াকৈরের আওয়ামী লীগের নেতাদের বলতে শোনা যায়। আজ ছাত্র শুয়ারদেরকে কবরে পাঠাবো। নেতারা মোটরসাইকেলে চলে গেলে। মুরাদ স্যার বলেন ভালো করে গেট বন্ধ করে রাখো। পরের দিন ছাত্ররা এসে কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক ভেঙ্গে দেন।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতারা বলছেন, আমার ভাইয়ের রক্তে এই দেশকে স্বাধীন করেছি। আর যারা আমাদের ভাইকে হত্যা করেছে তারা এখনো দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জাগায় বহল রয়েছে। আমরা আমাদের নেতা নাহিদ ভাইয়ের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী প্রযুক্তিবিদ ও প্রকৌশলী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের কাছে চিঠি দিব। একটা সময় নির্ধারণ করে দিব যাতে মুখোশ পরে আইসিটিতে এখনো যারা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার।’
আইসিটি বিভাগের কর্মকর্তাদের মুখেমুখে মুরাদসহ অনেকের নাম শোনা যায়। আইসিটির একাধিক কর্মকর্তা জানান,‘তাদের প্রত্যেকের বাড়ি নাটোর জেলায়। নিরাপত্তা কর্মকর্তা রুস্তম আলীর চাকরির সুপারিশ করেছিলেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও রাজশাহী-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম। ব্যবস্থাপক মুরাদ আলম মনিরের চাকরির সুপারিশ করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক এক মুখ্য সচিব। সহকারী ব্যবস্থাপক (লজিস্টিকস) এম এম মঈনুল হোসেন পলকের তৎকালীন একান্ত সচিব ও বগুড়ার বর্তমান জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামের আত্মীয়।’
উল্লেখ্য গাজীপুরের কালিয়াকৈরে চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় তৈরি করা হয় ফোর টায়ার জাতীয় ডেটা সেন্টার। এটি নির্মাণে কাজ করে চীনের কোম্পানি জেডটিই। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর শুরু হয়ে নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০১৯ সালের জুন মাসে। প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতায় ব্যয় বাড়ে আরও ১০০ কোটি টাকা। ২০২০ সালে এটি পরিচালনায় বিডিসিসিএল গঠন করা হয়।