ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের সচিব মোঃ জাকির হোসেন বাচ্চু ও ম্যানেজার (অপারেশন) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। পতিত সরকারের আমল হতে বিসিসির প্রশাসন শাখায় পোস্টিংয়ের পর থেকে সচিব মোঃ জাকির হোসেন বাচ্চু ও মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম নিজেকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী পরিচয়ে সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর বিভিন্ন অবৈধ এজেন্ডা বাস্তবায়নে নিয়জিত রয়েছে। সরকারের পরিবর্তনের পরে সম্পূর্ণ ভোল পাল্টিয়ে মনিরুল নিজেকে এখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল কর্মী পরিচয় দিয়ে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে বিসিসির অন্যান্য কর্মকর্তাদের উপর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। মনিরুল তার বিভিন্ন ব্যক্তিগত এজেন্ডা ও ক্ষোভ সচিব মোঃ জাকির হোসেন বাচ্চুর সহায়তায় তার যোগসাজশে বাস্তবায়ন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে বিসিসির কর্মকর্তাগণ মনিরুলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের প্রমাণসহ বিসিসির নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ মেহেদী হাসান বরাবর উপস্থাপন করলেও কোন এক অজানা কারণে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বিসিসির সমস্ত পর্যায়ের কর্মকর্তা যেন মনিরুলের শক্তি ও স্বেচ্ছাচারিতার কাছে অসহায়।
বিসিসির সর্বশেষ প্রথম শ্রেণীর নিয়োগ পরীক্ষায় লিয়াজো অফিসার (আইটিইই) পদে বিসিসির প্রশাসন শাখার আরেক কর্মকর্তা মোঃ জুলইয়া দাইনের অবৈধ (গোপনে বিবাহিত) দ্বিতীয় স্ত্রী আইসিটি ডিভিশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (পরিকল্পনা-৩ শাখা) ইসরাত অনামিকাকে নিয়োগ দানের জন্য বিসিসির সচিব মোঃ জাকির হোসেন বাচ্চুর মাধ্যমে মনিরুল ও মোঃ জুলইয়া দাইন পরস্পর যোগসাজশে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় ইসরাত অনামিকাকে (প্রবেশপত্রের ক্রমিক নং – LO-055) প্রথম বানায়। বিষয়টি বিসিসির অন্যান্য সৎ কর্মকর্তারা জানতে পারলে, কর্মকর্তাগণ বিসিসির নির্বাহী পরিচালক বরাবর সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ করেন। মনিরুল ও জুলইয়া দায়েন তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি স্বীকার করে নেন এবং মনিরুল সর্বসম্মুখে জানান, তার প্ররোচনায় ও সাহায্যে জুলইয়া দায়েন সরকারি নিয়োগ পরীক্ষাটির প্রশ্ন ফাঁস করেছে। এরপরও নির্বাহী পরিচালক ড. মেহেদী কোন এক অজানা কারণে মনিরুল ও জুলইয়া দায়েনের বিরুদ্ধে কোন প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিয়ে ইসরাত অনামিকাকে ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষায় ফেল করিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেন। বিসিসিতে নিয়মিত বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ব্যবহারিক ও লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এইসব পরীক্ষায় সচিব জাকির হোসেন বাচ্চু, মনিরুল, জুলইয়া দায়েন ও বিসিসির আরেক কর্মকর্তা মধুসূদন চন্দের বিরুদ্ধে প্রশ্ন ফাঁসের করে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় নাই।
মনিরুল প্রশাসন শাখায় কর্মরত থেকে প্রভাব খাটিয়ে অন্যান্য যোগ্য কর্মকর্তাদের বঞ্চিত করে বিসিসির জাতীয় ডাটা সেন্টারের গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক্যাল পদ ম্যানেজার (অপারেশন) পদে পদোন্নতি ভাগিয়ে নেন। কিন্তু নিজের প্রভাব প্রতিপত্তি বজায় রাখতে জাতীয় ডাটা সেন্টারের গুরুত্বপূর্ণ কাজে যোগদান না করে প্রশাসন শাখায় থাকার জন্য নিম্ন গ্রেডের পদ ডেপুটি ম্যানেজার (মানব সম্পদ) পদে সচিব জাকির হোসেন বাচ্চু ও নির্বাহী পরিচালক ড. মেহেদী কে ম্যানেজ করে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। প্রশাসন শাখায় কাজ করে স্বেচ্ছাচারিতা দেখিয়ে (সে নিজে যেহেতু প্রকৌশলী নয়), বিসিসির জুনিয়র ৩২ জন প্রকৌশলী কর্মকর্তাদেরকে সরকারি নিয়মানুযায়ী একটি অতিরিক্ত বেতন বৃদ্ধি করতে অন্যয্যা ও বৈষম্যমূলকভাবে গড়িমসি করার অভিযোগ রয়েছে। এই নিয়ে বিসিসির জুনিয়র প্রকৌশলী কর্মকর্তাদের মধ্যে বিস্তর ক্ষোভ বিরাজ করছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট অভিযোগ করেও তারা কোন সুরহা পায়নি। তাছাড়াও বিসিসির অন্য একজন কর্মকর্তা (মনিরুলের সমগ্রেডের) চাকরিকাল গণনা নিয়েও অন্যয্যাভাবে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ রয়েছে। উক্ত কর্মকর্তার নিকট সকল প্রকার আইনগত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট থাকার পরও মনিরুল তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায় বলে জানা যায়। মনিরুলের প্রভাবের কারণে উক্ত কর্মকর্তা সচিব জাকির হোসেন বাচ্চুর সাথে এই বিষয়ে কথা বলারও সুযোগ পান নাই ও সচিব তাকে সরাসরি জানিয়ে দেন, মনিরুলের সাথে কথা বলতে। বাচ্চু – মনিরুলের কাছে যেন পুরা বিসিসি জিম্মি ও অসহায়। বিসিসির ৩ জন পরিচালক সরাসরি তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে নির্বাহী পরিচালক ড. মেহেদী বরাবর অভিযোগ করেছেন। কিন্তু নির্বাহী পরিচালক বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দিলেও কোন এক অজানা কারণে এখনো পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় নাই।
বিসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় খুলনা ও বরিশালে আঞ্চলিক পরিচালক হিসাবে দায়িত্বপালনকালে মনিরুলের বিরুদ্ধে ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তীতে বিসিসির সাবেক নির্বাহী পরিচালক পার্থ প্রতিম দেবকে বড় অংকের ঘুষ প্রদান করে বরিশাল হতে বিসিসির প্রধান কার্যালয়ের প্রশাসন শাখায় পোস্টিংয়ের মাধ্যমে ছাত্রলীগ পরিচয় দিয়ে সাবেক প্রতিমন্ত্রী পলকের আস্তাভাজন হয়ে উঠেন। তার মাধ্যমে বরিশাল ও খুলনার দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে সক্ষম হন। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির সদস্য থাকার সময় বিভিন্ন আইসিটি বিষয়ক টেন্ডারে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থের মালিক হওয়ার গুরুতর অভিযোগ মনিরুলের বিরুদ্ধে রয়েছে। কারিগরি জ্ঞান শূন্যের কোটায় হলেও প্রশাসন শাখায় দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে বিভিন্ন সরকারী সংস্থার লাভজনক কম্পিউটার বিষয়ক টেন্ডারের কমিটিতে নিজের নামে মনোনয়ন নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিসিসির বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাগণ মনিরুল ও জাকির হোসেন বাচ্চুর দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় ক্ষোভে ফুঁসছে। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য কারণে বিসিসির নির্বাহী পরিচালক যেন অসহায়।