ঢাকায় পরিবহন সেক্টরে বিশৃঙ্খলা করছে এনায়েত উল্যাহ খন্দকারের সঙ্গীরা

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই ঢাকায় যাত্রী পরিবহনে বিভিন্ন বাস কোম্পানির মালিকদের দাবি ছিল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের এনায়েত উল্যাহ খন্দকারের সহচর ও আর্শীবাদপুষ্ট আওয়ামী দালালদের হাত থেকে সাধারণ বাস মালিকদের পরিবহন সেক্টরের নানা অনিয়ম, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির হাত থেকে মুক্ত করা। বিগত ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী ও চাঁদাবাজ পরিবহন নেতারা ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর কিছু দিন নীরবে থাকার পর বিপুল পরিমাণ আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠনের সদস্য হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে, স্থানীয় সন্ত্রাসীদের নাম ভাঙ্গিয়ে এবং স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় আবারও ফিরে আসছে।

সম্প্রতি ঢাকার বসুমতী ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের এনায়েত উল্যাহ খন্দকারের সকল অপকর্মের সঙ্গী ও আর্শীবাদপুষ্ট প্রতিষ্ঠাকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল মুনসুর বুলবুল এবং কোম্পানিটির পরিচালনা কমিটির অন্যান্য পরিচালক সৈয়দ কামরুল হক দুলাল ও আল আমিন নূরুন নবী সবুজ এবং অন্য সদস্য জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, আকবর আহম্মেদদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ১৮ মার্চ ২০২৫ বাস মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে তারা নিজ মুখে অপকটে স্বীকার করে আওয়ামী সরকারের আমলে দীর্ঘ সময় ধরে এই চক্রটি ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি এবং বসুমতী কোম্পানিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিল। এখন নতুন রূপে ভিন্ন রাজনৈতিক দলের পরিচয় দিয়ে সাধারণ মালিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে এবং চাঁদাবাজি ও ফ্যাসিজম আবারও প্রতিষ্ঠা করেছে।

সাধারণ মালিকদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সময়ে ঢাকা সড়ক পরিবহনের ত্রাস ও কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান এনায়েত উল্যাহ খন্দকারের ব্যাপক দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও অপরাধের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে যুক্ত ছিলেন প্রতিষ্ঠাকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল মুনসুর বুলবুল এবং কোম্পানিটির পরিচালনা কমিটির অন্যান্য পরিচালক সৈয়দ কামরুল হক দুলাল ও আল আমিন নূরুন নবী সবুজ। তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে রুট পরিচালনার দায়িত্ব থাকে বর্তমান পরিচালনা কমিটির কর্মকর্তারা সাধারণ মালিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে আওয়ামী আমলের এনায়েত উল্ল্যাহ নির্দেশে বিভিন্ন মিটিং মিছিলে গাড়ি জব্দ করে অনেক মালিকদের জোর করে নিয়ে যেত। সাধারণ মালিকরা বর্তমানে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে সেসময়ে বিভিন্ন ছবি দেখিয়ে তাদের ভয়ভীতি ও মামলা করার হুমকি দিয়ে আসছে।

ছাত্র জনতার জুলাই গণ জাগরণের বিরুদ্ধে অবস্থানকারী, অস্ত্র –অর্থের যোগানদাতা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পরিবহন খাতের ত্রাস এনায়েত উল্লাহ হয়ে কাজ করা বর্তমান পরিচালনা কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে বাড্ডা ও যাত্রাবাড়ী থানায় ছাত্রদের ওপর হামলা ও হত্যা মামলা থাকা স্বত্বতেও টাকার বিনিময়ে পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতায় আরও আওয়ামী ও ফ্যাসিজম প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা চলেছে। এর বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার ও বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র হত্যা মামলার আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার ও সুষ্ঠু বিচারের জন্য সবার সহযোগিতা দাবি জানিয়েছেন পরিবহনের সাধারণ মালিকরা।

বৈষ্যমহীন নতুন বাংলাদেশে সাধারণ মালিকদের প্রত্যাশা ছিল ঢাকায় সড়কে সুশৃঙ্খলা ফিরে আসবে এবং ওয়েবিলের নামে চাঁদাবাজি বন্ধ হবে। কিন্তু ৫ আগস্টের পর কিছুদিন ওয়েবিলের নামে চাঁদাবাজি বন্ধ থাকার পর পরিবহন কোম্পানি ব্যয় পরিচালনার নামে আবারও ওয়েবিল চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। আর চাঁদাবাজির টাকা দিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির বিভিন্ন পর্যায়ে নেতাদের সঙ্গে আতাত করে নানা অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা শুরু করেছে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও ট্রাফিক বিভাগের নিরব ভূমিকার সুযোগ নিয়ে রুট পারমীটহীন অথবা ভিন্ন রুটের গাড়ি অন্য রুটে চলাচলের সুবিধা দেওয়া ও ফিটনেসবিহীন বাস ঢাকায় চলাচল করছে যার ফলে সাধারণ মালিকরা আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন।

বসুমতী ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি লিমিটেডের ম্যানেজমেন্ট কমিটি সম্প্রতি বসুমতীর রুট পারমিটহীন ১৪টি মিনিবাস গড়ে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা গ্রহণ করে বসুমতী ব্যানারে চলাচলের অনুমতি দিয়েছে । এর ফলে রুট পারমিট প্রাপ্ত বসুমতী মালিকরা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সাধারণ মালিকদের চাপে মুখে মিটিংয়ে আইন আমান্য করে রুট পারমিটহীন বাস বসুমতী পরিবহনে ব্যানারে নামানোর ঘটনা নিজ মুখে ভুল স্বীকার করেন বর্তমান অর্থ লুটপাটকারী আওয়ামী আমলের এনায়েত উল্লাহ খন্দকারের আর্শীবাদপুষ্ট প্রতিষ্ঠাকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল মুনসুর বুলবুল এবং কোম্পানিটির পরিচালনা কমিটির অন্যান্য পরিচালক সৈয়দ কামরুল হক দুলাল ও আল আমিন নূরুন নবী সবুজ এবং অন্য সদস্য জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, আকবর আহম্মেদসহ আরও অনেকে।

উল্লেখ্য এর আগে রুট পারমিটহীন গাড়ি নামানোর বিষয়ে সাধারণ মালিকদের সঙ্গে কোন প্রকার আলোচনা বা মিটিং ছাড়াই এ সিদ্ধান্ত নেয় বর্তমান ম্যানেজমেন্ট কমিটি। বসুমতী কোম্পানির মালিকদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এ বিষয়ে জানতে চাইলে, তারা গ্রুপে এডমিন প্যানেল থেকে রিপ্লাই দেওয়ার অপশন বন্ধ করে, মালিকদের ফোন করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এছাড়াও আরও ১০টি রুট পারমিটবিহীন মিনিবাস ঢুকানোর চেষ্টা করছে। এর ফলে সড়কে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টির পাশাপাশি আইন অমান্য ঘটনা ঘটছে, পাশাপাশি বসুমতী মিনিবাসের মালিকরাও আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

সাধারণ মালিকদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায় এনায়েত উল্লাহর আর্শীবাদপুষ্ট বসুমতি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল মুনসুর বুলবুলের বিরুদ্ধে ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতি ও বসুমতী কোম্পানির টাকা লুটপাট ও দূর্নীতির কারণে ২০২১ সালে তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে বসুমতীর রুট পরিচালনার দায়িত্ব দেন এনায়েত উল্লাহর ভাই মো. মনিরকে। সেসময়ও বর্তমান পরিচালনা কমিটির দুই পরিচালক সৈয়দ কামরুল হক দুলাল ও আল আমিন নূরুন নবী সবুজ কোম্পানির চেয়ারম্যান এনায়েত উল্লাগহ ও ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরের আস্থাভাজন হিসেবে তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী সকল প্রকার কুকর্ম ও চাঁদাবাজি করেছেন। ৫ আগস্টের পর কিছুদিন আত্মগোপনে থাকার পর স্থানীয় রাজনৈতিক বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের অর্থ দিয়ে দলের অঙ্গসংগঠন সদস্য হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিয়ে আবারও কোম্পানি পরিচালক হিসেবে ব্যাপক চাঁদাবাজি ও লুটপাট করছেন। তাদের এই অপকর্মের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে আবারও ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আওয়ামীলীগের আর্শীবাদপুষ্ট কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল মুনসুর বুলবুল যুক্ত হয়েছেন।

কোম্পানিটির এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে সাধারণ মালিকরা অভিযোগপত্র নিয়ে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে গেলে, তারা তা গ্রহণ না করে ফ্যাসিজমের দোসরদের সঙ্গে আলোচনায় বসে সমাধানের কথা বলেন। অভিযোগপত্রটি মামলা হিসেবে না নিয়ে, আইনের বিধান অমান্য করে অভিযোগপত্রের স্বাক্ষরকারী সাধারণ মালিকদের নামের তালিকাটি বর্তমান কমিটির কাছে দেন, যা সাধারণ মালিকদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছেন। তালিকা ধরে বর্তমান কমিটি সাধারণ মালিকদের নানা রকম মামলা ও হামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছেন।

Related Articles

Latest Posts